কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও করণীয়
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। কিন্তু যখন কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের লক্ষণগুলো শনাক্ত করা গেলে বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। আসুন জেনে নিই কিডনি রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং কখন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
✅
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ
১. ঘন ঘন প্রস্রাব অথবা প্রস্রাবে পরিবর্তন
- কিডনির সমস্যা হলে ঘন
ঘন প্রস্রাবের চাপ আসতে পারে, বিশেষ করে রাতে।
- কিছু ক্ষেত্রে
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে অথবা প্রস্রাবের রং গাঢ় ও
দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে।
২. হাত-পা ও চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া
- কিডনি সঠিকভাবে
কাজ না করলে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে ফুলে যেতে পারে।
- সাধারণত হাত,
পা এবং চোখের আশপাশে বেশি ফোলা দেখা যায়।
৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- কিডনি ভালোভাবে
রক্ত পরিশোধন করতে না পারলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়, ফলে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয়।
- শরীরে
আয়রনের ঘাটতি (অ্যানিমিয়া) দেখা দিতে পারে, যা আরও দুর্বলতা তৈরি করে।
৪. ত্বকে চুলকানি ও শুষ্কতা
- কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য অপসারণ করতে ব্যর্থ হলে ত্বকে
চুলকানি ও শুষ্কতা দেখা দিতে পারে।
- বিষাক্ত
পদার্থ জমে গিয়ে অ্যালার্জির মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
৫. খাবারে অরুচি ও মুখে ধাতব স্বাদ
- কিডনির কার্যকারিতা
কমে গেলে রক্তে বর্জ্য জমে যায়, যা মুখে ধাতব স্বাদ তৈরি করে এবং খাবারে অরুচি সৃষ্টি করে।
- এটি ধীরে ধীরে ওজন কমিয়ে দিতে পারে।
৬. কোমরে বা পিঠের নিচের অংশে ব্যথা
- কিডনির
পাথর বা সংক্রমণ থাকলে পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- অনেক সময় পেটে
বা কোমরের একপাশে তীব্র ব্যথা হয়।
৭. উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট
- কিডনি
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, তাই কিডনির সমস্যা হলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
- কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে
অতিরিক্ত তরল জমে গিয়ে শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
⚠️
কখন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো জরুরি?
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলোর মধ্যে
কোনো
একটি
থাকলে
কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর
পরামর্শ নেওয়া
উচিত—
✔️ ঘন ঘন প্রস্রাব অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
✔️ চোখ, মুখ, হাত-পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া
✔️ অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা ও মনোযোগের অভাব
✔️ ত্বকে চুলকানি বা অতিরিক্ত শুষ্কতা
✔️ পিঠের নিচের দিকে বা কোমরে ব্যথা
✔️ উচ্চ রক্তচাপ বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া
💡 কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়
✔️ পর্যাপ্ত পানি পান করুন – প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি
পান
করুন।
✔️ কম লবণযুক্ত খাবার খান – অতিরিক্ত লবণ
কিডনির
উপর
চাপ
সৃষ্টি
করে।
✔️ নিয়মিত রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করুন – এ
দুটি
সমস্যা
কিডনি
রোগের
প্রধান
কারণ।
✔️ সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন – ফলমূল
ও
শাকসবজি বেশি
খান,
প্রসেসড ফুড
এড়িয়ে
চলুন।
✔️ নিয়মিত ব্যায়াম করুন – স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় অভ্যস্ত হোন।
উপসংহার
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো
চিকিৎসা নিলে
ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তাই
কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর
পরামর্শ নিন
এবং
সুস্থ
থাকুন!
Comments
Post a Comment